বাংলাদেশ রপ্তানি প্রধান দেশ হলেও আমদানি করা হয় প্রচুর পরিমাণে। ইন্ডিয়া বাংলাদেশের পাশের দেশ হওয়াতে ইন্ডিয়া থেকেও প্রচুর পরিমাণে পণ্য বাংলাদেশে আমদানি করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের যেসব খাদ্য দ্রব্য আমদানি হয়ে থাকে তার প্রয় অধিকাংশ পণ্য আমদানি করা হয় ইন্ডিয়া থেকে। কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে ইন্ডিয়ায়তে প্রচুর খাদ্য শস্য উৎপাদন হয়ে থাকে। এ ছাড়া ইন্ডিয়া পোশাক শিল্পের জন্য বিখ্যাত । পোশাক এর মধ্যে আছে শাড়ি, থ্রিপিস, কাপড় উল্লেখযোগ্য হারে ইন্ডিয়া থেকে আমদানি করা । ফলে অনেকেই ইন্ডিয়ান পণ্য আমদানি করে ব্যবসা করতে চান। তাই আমাদের মধ্য অনেকেই জানতে চেয়েছেন কিভাবে ইন্ডিয়া থেকে পন্য আমদানি করে ব্যবসা করব। আজকের পোষ্টে বিস্তারিত লেখবো কিভাবে ইন্ডিয়া থেকে পণ্য আমদানি করবেন।
বাংলাদেশ ইন্ডিয়ার একবারে কাছের দেশ হওয়াতে বৈধ অবৈধ সকল পথেই পণ্য বাংলাদেশে আসে। তবে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে বৈধ পথে পণ্য আমদানি করা যাবে।
ইন্ডিয়া থেকে যদি আপনি ছোট পরিমাণে পণ্য আমদানি করতে চান। সেটার জন্য আপনি বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের সহযোগিতা নিতে পারেন। এছাড়াও ইন্ডিয়া থেকে আপনি পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পণ্য আমদানি করতে পারেন। তবে কুরিয়ারের মাধ্যমে পণ্য আমদানি করলে সেক্ষেত্রে আপনাকে অনেক টাকা ট্যাক্স এবং ভাড়া পরিষদ করতে হবে। কারণ আমরা নরমাল যেই পণ্য আমদানি করে থাকি সেটার চেয়ে বেশি পরিমাণে ট্যাক্স আসে কুরিয়ারে আমদানি করলে। প্রতি কেজিতে আপনাদেরকে প্রায় দুই হাজার টাকার মতো ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। কুরিয়ারে পণ্য আমদানি করলে আপনার কোন আমদানি লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে না।
এবার আলোচনা করবো ইন্ডিয়া থেকে বেশি পরিমান পন্য আমদানি করবেন। আমদানির প্রথমে আমাদের একটা বিসয় মনে রাখতে হবে যে, বৈধ ভাবে বিশ্বের যে কোন রাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি করতে আপনাকে আমদানি লাইসেন্স করতে হবে। কারন ইন্ডিয়া থেকে আমরা সাধারনত বাই রোডে পণ্য আমদানি করে থাকবো।বাংলাদেশের যে কোন স্তলবন্দরে আপনি পণ্য আমদনি করলে অবশ্যই আপনাকে আমদানি লাইসেন্স করে পণ্য আমদানি করতে হবে।
আমদানি করার জন্য প্রথম কাজ হলো সাম্পাল আমদানি করা । এই স্যাম্পল অধিকাংশ সময় ফ্রি দিয়ে থাকে।এসব স্যাম্পল DHL,FEDEX,TNT দিয়ে বাংলাদেশে আমদানি করতে হয়। আপনার যদি DHL,FEDEX,TNT তে আকাউন্ট না থাকে তবে স্যাম্পল এর জন্য আপানকে আগেই সেলারকে কুরিয়ার চার্জ পরিশোধ করতে হবে। এবার আপনাকে কুরিয়ার থেকে ফোন করে জানানো হবে আপনার পণ্য চলে আসেছে । দুই ভাবে আপনি পণ্যটি পেতে পারেন। কুরিয়ার কোম্পানি আপনার কাছে পৌঁছে দিবে অথবা আপনাকে পণ্যের সকল কাগজ পত্র দিয়ে যাবে, আপনি ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে সি এন্ড এফ দিয়ে পণ্য ছাড়িয়ে নিতে পারবেন।
স্যাম্পল পছন্দ হলে আপনি সাপ্লায়ারকে বলবেন পি আই দিতে। পি আই আসলে কি এটা নিয়ে আমাদের বিস্তারিত ভিডিও এবং আর্টিকেল আছে। দেখে নিবেন। আপনার কাজ এতটুকুই শেষ। এবারের কাজ হলো ইন্ডিয়ান যে সেলার আছে তার Importer Exporter Code (IEC)আছে কিনা তা নিশ্চিত করা। কারণ Importer Exporter Code (IEC) ছাড়া ইন্ডিয়া থেকে পণ্য রপ্তানি করা যায়না।
কিভাবে ইন্ডিয়া তে Importer Exporter Code (IEC) করতে হয়?
সাপ্লায়ার যদি না যানে তাহলে আপনি তাকে বলে দিবেন। আমদানি বা রপ্তানি কারক রা প্রথমে dgft ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে e-IEC এর জন্য একটা ANF2A অনলাইন ফর্ম পুরন করতে হবে। সাথে ডিজিটাল সাইন ও দিয়ে দিতে হবে। তবে এটা DIPP এর e-biz portal থেকেও করা যাবে। আপনি প্রথমে এই বিষয়টি জেনে নিবেন।
এলসি করা
পি আই নিয়ে এবার আপনি বাঙ্কে জাবেন। ব্যাংক আপনাকে পরবর্তী কাজের নির্দেশনা দিবে। ব্যাংকে আপনি টাকা জমা দিবেন। যত ডলার এল সি করতে চান। তবে এলসিতে আপনি যে পণ্য আমদানি করবেন মূল ক্রয় দাম উল্লেখ করতে হয়।খুব সাবধানে এলসি ফর্ম পুরন করতে হবে। এখানে আপনি যে পণ্য আনবেন তার নাম এবং HS কোড এবং ফুল ভ্যলু উল্লেখ করতে হবে। কোন ভাবেই যেন HS কোড ভুল না হয়।এবার ব্যাংক সকল কাগজ পত্র সেলারকে পাঠাবে। সেলার সব যাচাই বাছাই করে, ট্রাক চালান, এল সি ফর্ম, পি আই, কমার্শিয়াল ইনভএস, প্যাকিং লিস্ট পুনরায় বাঙ্কে পাঠাবে। ব্যাংক সকল কাগজ পত্র সাইন করে আপনাকে দিয়ে দিবে।
পণ্য ছাড় করানো
এবার আপনার কাজ হলে পন্য ছাড় করানো। সাপ্লায়ার আপনাকে আমদানি করা পন্যের সকল ডকুমেন্টস কুরিয়ার সার্ভিস এর মাধ্যমে পাঠিয়ে দিবে। পন্য পাওয়ার পর সকল ডকুমেন্টস একজন সি এন্ড এপ কে দিবেন। তিনি আপনার পন্য ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবে। পন্য ছাড়ানোর পর সি এন্ড এপ থেকে সকল ডকুমেন্টস বুঝে নিবেন। এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। সি এন্ড এপ কে কাজ দেওয়া আগে ভালো ভাবে কথা বলে নিবেন।
ইন্ডিয়া থেকে পন্য আমদানির অন্যন্য নিয়ম
এটা হলো আপনি পন্য কিনে বাংলাদেশ এর যে কোন শিপিং এজেন্ট এর ইন্ডিয়ার ওয়ার হাউস এ গিয়ে পন্য দিয়ে আসবেন তারা পন্য ইন্ডিয়া থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসবে। এ ক্ষেত্রে তারা কেজি হিসেবে শিপিং করে এনে দিবে। এটাকে বলে ডোর টু ডোরে পন্য আমদানি। এভাবে আপনি নিজে গিয়ে তাদের কাছে পন্য দিয়ে আসতে পারেন বা যে সাপ্লায়ার থেকে পন্য আপনি অনলাইনে কিনবেন তাদের বলবেন তাদের বাংলাদেশের শিপিং এজেন্ট এর ঠিকানায় পাঠাতে। তবে যে পন্য গুলো খুব দামী সেগুলো এ সিস্টেমে আপনি আমদানি করবেন না।
লাগেজ এর মাধ্যমে পন্য আমদানি, যেমন আপনি ইন্ডিয়া থেকে কিছু পরিমাণ পন্য আমদানি করতে পারেন। ফ্রি টেক্স দিয়ে।
টেক্স দিয়ে লাগেজ করে পন্য আমদানি করতে পারেন তবে সেটি বাংলাদেশ লাগেজ আইন অনুযায়ী হবে। বাংলাদেশ লাগেজ আইন পড়তে এখানে ক্লিক করুন। আপনি যদি লাগেজ করে বেশি পন্য আমদানি করেন তাহলে লাগেজ আইন অনুযায়ী তা বাজেয়াপ্ত করবে।
এ ছাড়া অবৈধ অনেক উপায়ে পন্য আমদানি করতে পারেন। সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত অলোচনা করা হলো না। অবৈধ পথে পন্য আমদানি করতে কিছু কম খরচ হবে। কিন্তু এক বার যদি পন্য না আসে তাহলে আপনার এত দিনের সকল ব্যবসা শেষ। তাই আমাদের উপদেশ হলো বৈধ ভাবে পন্য আমদানি করা। যদি আপনি সকল বিষয়ে না জানেন তাহলে আপনি আমাদের এই ওয়েব সাইটে দেখতে পারেন।
ইন্ডিয়া থেকে আমদানি করতে কিছু বিষয় খেয়াল রাখবেন
পণ্যের দাম কোন মুদ্রায় ঘোষণা করবেন ? ডলার নাকি রুপিতে ? ওরা সাধারণত রুপিতে সেল করে। আপনি যে কোন মুদ্রা এল সি তে উল্লেখ করতে পারবেন। সেটা সাপ্লায়ার এর সাথে কথা বলে নিবেন। ইন্ডিয়া থেকে সাধারণত ট্রাকে করে পন্য আমদানি করা হয় । এয়ারে সাধারণত খুব দামী পন্য আমদানি করা হয়। ট্রাকে পন্য আমদানিতে শিপিং খরচ কম হয় তাই কলকাতা বা আসে পাশের এলাকা গুলি থেকে আমদানি করার চেষ্টা করবেন। যেহেতু আমরা উভয়ে সার্ক ভুক্ত দেশ, তাই কিছু পণ্য আমদানিতে ট্যাক্স মউকুপের বিশেষ সুযোগ রয়েছে। আপনারা আমদানি করার আগে অবশ্যই সেগুলি ভালো করে যেনে নিবেন। খাদ্য দ্রব্র যেমনঃ চাল, ডাল , পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি আমদানি করতে সরকারের বিশেষ নিয়ম কানুন রয়েছে । কোন পোর্ট দিয়ে কোন পন্য আমদানি করবেন সেটা নির্ধারণ করবেন শিপিং চার্জ কোন পোর্ট এ কম আসে।